চৌকাঠ
চৌকাঠ
By Sucharita Bonthapally
আপাত দৃষ্টিতে চৌকাঠ গৃহস্থ বাড়ীতে অত্যন্ত মামুলী একটি জিনিস। দরজার ফ্রেমের নীচে নিরীহ ভাবে পড়ে থাকে। আধুনিক ফ্ল্যাট বাড়ীগুলোতে আজকাল চৌকাঠ রাখা হয় না। আমাদের ছোটোবেলায় ঘরে ঘরে দরজায় দরজায় চৌকাঠ ছিল। মা-জেঠী-ঠাকুমারা শিখিয়েছিলেন, চৌকাঠে পা রাখতে হয় না। ওটা আলগোছে ডিঙ্গিয়ে যেতে হয়, কেননা চৌকাঠে মালক্ষ্মী থাকেন। আমাদের প্রজন্মে আমরা বেশী ভাগ বাধানিষেধ, নিয়মনিগড় বিনা প্রশ্নে মেনে নিতাম। তাই চৌকাঠে পা রাখিনি কখনো। ঘরের শিশুরা যখন প্রথম প্রথম চলতে শেখে, তারা শুরুর দিকে হাঁটে না, কেবল দৌড়োয়, আর প্রায়ই তারা চৌকাঠে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। আমি, আমার ভাই বোন আরো অন্যরা এই ভাবে হোঁচট খেতে খেতেই একদিন, দৌড়ে চৌকাঠ ডিঙ্গিয়ে যেতে শিখে যাই।
দক্ষিণ ভারতীয়রা, বিশেষতঃ তেলেগুদের দেখেছি চৌকাঠ হলুদ রঙ করে তাতে আলপনা দিতে। প্রতি শুক্রবার ছাড়াও নানা উত্সবে, অনুষ্ঠানে দরজায় আমপাতা, চৌকাঠ লতাপাতার নক্শা।
চৌকাঠটা কি? সেটা কি বাইরের আর একান্ত নিজস্ব আমাদের ভেতরের পৃথিবীর সীমারেখা? তাহলে কি আমারও বা আমাদের সকলেরই এক একটা চৌকাঠ আছে?
চৌকাঠকে যদি প্রতিবন্ধক ভাবি, তাহলে বাইরে আলোকিত সাদা পৃথিবী। আর চৌকাঠকে যদি নিরপত্তার লক্ষ্মণরেখা ভাবি তাহলে বাইরে অন্ধকার কালো পৃথিবী। কিন্তু আমরা সবাই জানি পৃথিবী ধূসর। তাই একই দরজার বাইরে একবার আলো দেখা যায়, একবার আঁধার।
আমার শৈশবের সেই বাড়ীটা –
কালো পাড় দেওয়া লাল ঠান্ডা মেঝে,
লম্বা লোহার শিক বসানো জানলা,
সবুজ রংয়ের কাঠের পাল্লায় খড়খড়ি,
ঘুলঘুলিতে ছানাপোনা নিয়ে চড়াইয়ের সংসার।
লোহার রেলিং দেওয়া মস্ত লাল বরান্দা,
ঘরে মাথার ওপরে অনড়,
একটা ঘটঘটে ফ্যান,
আর দরজায় দরজায় চৌকাঠ।
দৌড়াতে গিয়ে চৌকাঠে ধাক্কা পড়ে যেতাম।
একবার আমার ঠোঁট কেটে গেল,
সে দাগ আজও আছে।
আস্তে আস্তে চৌকাঠের অভ্যাস হয়ে গেল,
চোখ সতর্ক না করলেও
পা হয়ে গেল সাবধানী।
মা বলতো,
“শহরের ফ্ল্যাট বাড়ীগুলোয় চৌকাঠ নেই”।
এখানে, আমার দক্ষিণ ভারতীয় প্রতিবেশীর বাড়ী,
প্রতি শুক্রবার,
চৌকাঠে নতুন জ্যামিতিক আলপনা;
উত্সবে, অনুষ্ঠানে, দরজায় আমপাতা, আর,
চৌকাঠকে হলুদ, তেল, সিঁদূরে সাজিযে তোলা।
আজকাল,
আমিও বেশ বুঝেছি,
বাড়ীতে চৌকাঠ থাকা দরকার।
মেয়ে বড় হচ্ছে।
Read Sucharita Banthapally & found its excellency on its every word . It touches….